এই লেখাটি যায়যায়দিনে ছাপা হয়েছিল ডিসেম্বরে ২০০৯ এর শেষ সপ্তাহে
আমেরিকান ফিল্ম ইন্সটিটিউট (এএফআই) ২০০০ সাল থেকে সাফল্যের সঙ্গে বছরের সেরা দশটি চলচ্চিত্রকে নির্বাচন করে সম্মাননা দিয়ে আসছে। পর্দার সামনে এবং পেছনের সবকিছু মিলিয়েই এ নির্বাচনের কাজটি করে ১৩ সদস্যের জুরি বোর্ড যাদের মধ্যে চলচ্চিত্র সমালোচক, অভিনেতা, চলচ্চিত্র বিশারদ এবং এএফআই ট্রাস্টির সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত। এএফআই ১৩ ডিসেম্বর ২০০৯ সালের নির্বাচিত সেরা দশটি চলচ্চিত্রের তালিকা প্রকাশ করেছে।আগামী ১৫ জানুয়ারি লস অ্যাঞ্জেলেসের ফোর সিজনস হোটেলে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নির্বাচিত চলচ্চিত্রগুলোকে পুরস্কার দেয়া হবে। তালিকায় থাকা প্রথম সাতটি চলচ্চিত্রে একটু নজর দেয়া যাক।
কোরালাইন
২০০২ সালে প্রকাশিত নীল গেইম্যানের কোরালাইন উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্রটি একটি এনিমেটেড চলচ্চিত্র। এ বছরের দ্বিতীয় মাসে মুক্তিপ্রাপ্ত এ চলচ্চিত্রটি কিছুটা হরর এবং ফ্যান্টাসি ধাঁচের। কোরালাইন নামের ছোট্ট মেয়েটি তাদের নতুন বাসার গোপন এক দরজা দিয়ে প্রবেশ করে নতুন এক জগতে যেখানে ঠিক তার মতোই ভিন্ন এক কোরালাইন, মা-বাবাকে দেখতে পায়। সে জগৎ আরো সুন্দর, আকর্ষণীয়। ভিন্ন জগতের বাবা-মা কোরালাইনের আসল বাবা-মায়ের চেয়ে অনেক যতœশীল হলেও তাকে সেখানেই চিরদিনের জন্য থেকে যেতে বলে, শর্ত একটাই, কোরালাইনের সুন্দর চোখে দুটো বোতাম সেলাই করে দেয়া হবে। কোরালাইন ফিরে আসতে চায় কিন্তু পারে না। হেনরি সেলিকের পরিচালনায় নির্মিত এবং আইএমডিবি রেটিংয়ে খুবই জনপ্রিয় এ চলচ্চিত্রটি মুক্তির পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ১২০ মিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করেছে।
দ্য হ্যাংওভার
চারজন ভিন্ন চরিত্রের পুরুষ যারা পরস্পর বন্ধু যথাক্রমে ডগ, স্টু, ফিল এবং অ্যালান, লাস ভেগাসে একটি ‘স্ট্যাগ পার্টি’তে যায়। শিগগিরই বিয়ে করতে যাচ্ছে এমন এক পুরুষকে উপলক্ষ করে দেয়া পার্টিই হলো স্ট্যাগ পার্টি। কমেডিতে এ পুরুষটি হলো ডগ, যে কি না শিগগিরই অ্যালানের বোন ট্রেসিকে বিয়ে করতে যাচ্ছে। লাস ভেগাসে পৌঁছে এক হোটেলে রাত কাটায় তারা এবং সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর আবিষ্কার করে গত রাতের কিছুই তাদের মনে নেই। সবচেয়ে রহস্যজনক হলো স্যুটে যা না থাকার কথা ছিল তা আছে, কিন্তু যা থাকার কথা ছিল তা নেই, বিশেষ করে বর যে সেই ডগই হারিয়ে গেছে। তাকে খুঁজে বের করাই তখন মূল কাজ, আর এ কাজ করতে গিয়েই ঘটে হাস্যরসাত্মক সব ঘটনা যা Ñ নিয়ে নির্মিত হয়েছে দ্য হ্যাংওভার। জুন মাসে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রটির পরিচালক টড ফিলিপস এবং অভিনয় করেছেন জাস্টিন বার্থা, এড হেমস, ব্রাডলি কুপার এবং জ্যাক গ্যালিফ্যানাকিস।
দ্য হার্ট লকার
দ্য হার্ট লকার ইরাকে আমেরিকান দখলদারির যুদ্ধ নিয়ে নির্মিত থ্রিলার। যুদ্ধ চলাকালে বোমা নিস্ক্রিয় করার কাজে নিয়োজিত স্কোয়াডকে ঘিরে কাহিনীটি লিখেছেন মার্ক বোল যিনি নিজেও এক সময় এ ধরনের স্কোয়াডে যুক্ত ছিলেন। ক্যাথেরিন বিগলোর পরিচালনায় চলচ্চিত্রটির মূল চরিত্র উইলিয়াম জেমস যার টিমে রয়েছে আরো দুইজন বোমা বিশেষজ্ঞ যাদের একজন মৃত্যু ভয়হীন বেপরোয়া যে কি না টিমের বাকিদের নিরাপত্তার ব্যাপারে খুবই উদাসীন আবার অন্য একজন সবার নিরাপত্তার ব্যাপারে খুবই সতর্ক কারণ একজনের ভুলের কারণে মারা যেতে পারে তার সহকর্মীরা কিংবা শত শত নিরপরাধ মানুষ। চলচ্চিত্রটি ২০০৮ সালে বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হলেও সারা বিশ্বে মুক্তি পায় ২০০৯ সালের জুন মাসে।
দ্য মেসেঞ্জার
ডিরেক্টর হিসেবে অরেন মুভারম্যানের এটাই প্রথম চলচ্চিত্র অথচ এর মধ্যেই প্রায় ছয়টি পুরস্কার জিতে নিয়েছে। গত নভেম্বরে মুক্তি পাওয়া এ চলচ্চিত্রটি এর মথ্যেই প্রায় ৪৭৪ হাজার ডলার আয় করেছে। শক্তিমান অভিনেতা বেন ফস্টারের চলচ্চিত্রটিতে রূপদান করেছে উইল মন্টেগোমারি চরিত্রে যিনি সদ্য ইরাক থেকে ছুটিতে ফেরত এসেছে। রয়েছে কঠিন দায়িত্ব, যুদ্ধে নিহত সহকর্মীর মৃত্যুসংবাদ পৌঁছে দিতে হবে তারই স্ত্রীর কাছে। কিন্তু অলিভিয়া চরিত্রে সামান্থা মর্টনের কাছে পৌঁছা মানসিক অবস্থার পরিবর্তন শুরু হয়। রোমান্টিক ধাঁচের এ চলচ্চিত্রটি সবার নজর কেড়েছে।
প্রেশাস
লি ড্যানিয়েলসের দ্বিতীয় চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে ১৯৯৬ সালে পুরস্কারপ্রাপ্ত একই নামের উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে। নারী অভিনেতাসমৃদ্ধ এ চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্র গ্যাবোরি সিডিবে, একজন কালো মেয়ে, যে তার জীবনে বহু নির্যাতন সহ্য করেছে। আর তাই অশিক্ষিত, রাগী, গরিব আর মোটা এ মেয়েটি বেড়ে ওঠে সবার অলক্ষ্যে। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছে গ্যাবোরি সিডিবে, মূলত তার কাহিনী নিয়েই তৈরি চলচ্চিত্রটি। আরো অভিনয় করেছে গায়িকা মারায়া ক্যারি ও পলা প্যাটন।
আ সিরিয়াস ম্যান
টম হ্যাঙ্কস অভিনীত লেডি কিলার এবং ২০০৭ সালে অস্কার জয়ী চলচ্চিত্র ‘নো কান্ট্রি ফর ওল্ড ম্যান’ খ্যাত কোয়েন ব্রাদার্সের নতুন চলচ্চিত্র আ সিরিয়াস ম্যান। ১৯৬৭ সালের পটভূমিকায় নির্মিত এ ব্ল্যাক কমেডির মূল চরিত্র ল্যারি গপনিক। তার ভাইয়ের কারণে তার স্ত্রী বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নি”েচ্ছÑ এমন এক কাহিনী নিয়ে এগিয়েছে চলচ্চিত্রটি। গত ডিসেম্বরে মুক্তিপ্রাপ্ত এ চলচ্চিত্রতে ল্যারি চরিত্রে অভিনয় করেছে মাইকেল স্টলবার্গ।
আ সিঙ্গেল ম্যান
টম ফোর্ড তার পরিচালনা, প্রযোজনা এবং চিত্রনাট্য রচনা শুরু করেছেন আ সিঙ্গেল ম্যান চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। যাটের দশকের একজন সমকামী বৃটিশ কলেজ প্রফেসরকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে। পার্টনারের হঠাৎ মৃত্যুর পরে নিজের জীবনকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করাÑ এ দিয়ে শুরু চলচ্চিত্রটি। মূল চরিত্রে কলিন ছাড়াও অভিনয় করেছে জুলিয়ান ম্যুর। চলচ্চিত্রটি ডিসেম্বরে মুক্তি দেয়া হয়েছে।