শর্টফিল্ম ‘চ্যাট স্টোরি: পথচলার গল্প’র পেছনের গল্প

১.
বছর দুই তিন আগে AZ এর সাথে কথা বলতে বলতে একটা গল্প তৈরী করে ফেলেছিলাম। বাচ্চা কালো হলেও মা’র চোখে সেই সুদর্শন, আমার লেখা গল্পের ক্ষেত্রেও তাই। আমার গল্প আমি পড়ি আর অবাক হই – এই গল্প আমি কিভাবে লিখলাম!! তারও বছর খানেক পরে, মারুফ তখন কাজ টাজ করে হাত পাকাচ্ছে, কথাপ্রসঙ্গে তাকে বললাম, ‘একটা শর্টফিল্ম বানাবা নাকি এই স্টোরিতে?’ হাত আরও পাকানোর জন্য মারুফের যে কোন একটা স্টোরি দরকার ছিল, আমার কথায় না করল না সে। তারপর দিন কয়েক মারুফ আর শামীমের সাথে আমি বসলাম, যদি কিছু করা যায় এই আশায়। স্টোরি কাটছাট হল, ক্যারেক্টারের টাইপ ফাইনাল করা হল, আর দিন কয়েকের পরিশ্রমে কাজ নেমে যাবে, কিন্তু কাজ নামল না। শামীম ভয়ানক ব্যস্ত হয়ে গেল, শামীমের সাহায্য ছাড়া কাজ নামানো অসম্ভব এই চিন্তায় আমিও কেটে পড়লাম। তারও বছরখানেক পরে একটি মারুফ নক করল -” ‘…’ শব্দটা পাল্টায়ে দিলাম।” আমি পড়লাম আকাশ থেকে – মারুফ এখনো সেই কাজ ধরে রেখেছে? শামীমের কাজ মারুফ একাই করেছে, বন্ধুকে নিয়ে অরিজিনাল স্কোর তৈরী করেছে, কাজ শেষ করে তারপর আমাকে ডেকেছে – ‘দেখে যান’।

এই হল ‘চ্যাট স্টোরি: পথচলার গল্প’র গল্প। আমার প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র ফিকশন যার ভিজ্যুয়ালাইশেন হল।

২.
গত নভেম্বরের কথা। মারুফের সাথে কথা হচ্ছিল – ‘আমি তাকে বলি, কিছু একটা করো, শর্ট ফিল্ম টর্ট ফিল্ম একটা বানাও, আমি আছি পেছনে’। জবাবে মারুফ আমাকে বলে, আপনি পেছনেও নাই। সত্য কথার ধার বেশী, কেটে গিয়ে রক্তারক্তি কাণ্ড। জবাবে আমি তারে বললাম, ঠিক আছে, “আজ পাঁচ নভেম্বর রাত থেকে শুরু হল প্রজেক্ট নভেম্বর, আগামী পাঁচ ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা একটা শর্ট ফিল্ম নামাবো।”

ফিল্ম টিল্ম বানানো আমাকে দিয়ে সম্ভব না, কিন্তু দৈনিক একবার ডেকে কি বলতেও পারবো না – ফিল্মের কি অবস্থা? মোশতাক হল গল্পের ফ্যাক্টরি। সে আইডিয়া দেয়, আইডিয়া নিয়া আমরা ডিসকাস করতে শুরু করলে সে আরেকটা আইডিয়া দেয়, আমাদের কাছে ওইটাকে বেশী ইন্টারেস্টিং মনে হয়, এর মাঝে সে আরেকটা আইডিয়া দেয়। শেষ পর্যন্ত তাকে থামানো হল জোর করে। নাঈম ডিরেকশনের দায়িত্ব নেয়ার পর আমরা সবাই হাত গুটিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম ছবির জন্য, যেনো অটোমেটিক স্টোরি থেকে সিনেমা হয়ে যাবে। এমনিতে নাঈম সবসময় ঘুমায়, কিন্তু একবার জেগে উঠলে সে আর ঘুমায় না – আইডিয়াকে টেনে ঠিক ঠিক সিনেমা পর্যন্ত নিয়ে গেল সে। প্রজেক্ট নভেম্বর শেষ হল ডিসেম্বরের পঁচিশ তারিখ, তৈরী হল শর্ট ফিল্ম ‘খবরাক্রান্ত’। (ট্রেলার মন্তব্যের ঘরে)

৩.
ছোট এই দুই ভাইয়ের দুটি শর্ট ফিল্মই ঢাকা ইউনিভার্সিটি ফিল্ম সোসাইটির আয়োজনে 7th International Inter University Short Film Festival 2015 এ নির্বাচিত হয়েছে! আগামীকাল থেকে শুরু হবে এই ফিল্ম উৎসব। ‘চ্যাট স্টোরি: পথচলার গল্প’ প্রদর্শিত হবে প্রথম দিন দ্বিতীয় সেশনে (দুপুর ৩টা – ৫টা) এবং দ্বিতীয় দিন তৃতীয় সেশনে (সন্ধ্যা ৬টা – ৮টা)। অন্যদিকে খবরাক্রান্ত প্রদর্শিত হবে শুধুমাত্র দ্বিতীয় দিন প্রথম সেশনে (দুপুর ১২টা – ২টা)। দুটো শর্ট ফিল্মই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অডিটোরিয়ামে বিনামূ্ল্যে প্রদর্শিত হবে – আপনাদের আমন্ত্রন জানাচ্ছি।

৪.
প্রিয় মারুফ রায়হান এবং প্রিয় নাজমুল হক নাঈম- তোমাদের নির্মানে আমাকে জড়িয়েছো, এজন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় আমাকে টেনে নিতে ভুলো না যেন!

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *