স্বশিক্ষাই সুশিক্ষা

একটা ট্রে-তে সাজানো কতগুলো পিরিচ, আর পিরিচে সাজানো লাল-সাদা মিষ্টি, দুটো-তিনটে-চারটে। এই ট্রে নিয়ে আমি দরজায় দরজায় যাচ্ছি, দরজা খোলার পর আম্মার নির্দেশিত দু-তিন কিংবা চার মিষ্টির পিরিচ বাড়িয়ে দিয়ে বলছি – ভাইয়ার মিস্টি। ফার্স্ট ডিভিশন তিনটা লেটার। এত বছর আগের ঘটনা যে আমি মনেই করতে পারছি না ওইসময় কি আমি একা ছিলাম নাকি আমার ভাইদের কেউ আমার সাথে ছিল, কিন্তু এতটুকু মনে আছে – কেউ কেউ আগ্রহী হয়ে হাসিমুখে জিজ্ঞেস করেছে – কোন বিষয়ে লেটার, আমি বলছি তিন সাবজেক্টের কথা, অথচ লেটার বলতে ঠিক কি বোঝায় সেটাও আমার জানা নেই।

পট পাল্টেছে। গতকালকে পিএসসি এবং জেএসসির রেজাল্ট পাবলিশ হওয়ার পর কয়েকজনের রেজাল্ট দেখে দিতে হল অনলাইনে – সব্বাই সব্বিষয়ে এ প্লাস। কলিগকের অমুক-তমুকের রেজাল্ট শুনছি – সব্বাই এ প্লাস। কপাল পোড়া কেবল অফিসের পিওন জাহেরের। উত্তরবঙ্গ থেকে পরীক্ষা দেয়া তার ছাওয়ালটা এ প্লাস পায় নি। এ প্লাসের এরকম লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়া উৎপাদনের সময়ও এ প্লাস না পাওয়ায় জাহের তার ছেলের পাছায় জোরসে থাবা দিয়েছে কিনা জেনে নিতে হবে।

প্রত্যেক বছর চৌদ্দই ডিসেম্বর আসলে দেশের সব দৈনিক পত্রিকায় বিশেষ সংবাদ ছাপানো হয়, রেডিও-টিভিতে গম্ভীর মুখে খবর পড়েন, ”… … দেশকে মেধাশূন্য করার জন্য এদেশের মেধাবী সন্তানদের … …”। ইদানিং এই খবর পড়ে বিশেষ কোন বোধ তৈরী হয় না – এখন যে প্রজন্ম স্কুলে পড়ছে কদিন পরে তারা হয়তো ‘মেধাশূন্য’ বলতে কি বোঝায় তা বোঝার মেধাটুকুও হারাবে। ষোল-সতেরো বছর ব্যাপী শিক্ষা ব্যবস্থার এমন কোন দিক নেই যেখানে গোলমাল নেই – স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা-পিএসসি-জেএসসি-এসএসসি-এইচএসসি পার হয়ে যদি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ ভর্তি হতেও পারে তবে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া ফাঁকিবাজ শিক্ষকবৃন্দের কাছ থেকে শেখার সামান্য সম্ভাবনাটুকুও দূর হয়।

ফাহমিদুল হক স্যার আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন – কতটুকু সফল হবে জানি না, সাড়া তো পড়েই গেছে। একই আন্দোলন সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে হতে পারে, হওয়া উচিত। সেই সকল বাবা-মা’দের (বর্তমান ও ভবিষ্যত) উচিত এই আন্দোলনে শরীক হওয়া যারা চান তাদের সন্তানের মেধার সঠিক মূল্যায়ন হোক – পিএসসির-জেএসসি’র এ প্লাসে খুশি হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারার কষ্টে যেন ভুগতে না হয়।

আদিম যুগে ফিরে যাচ্ছি আমরা – স্বশিক্ষাই যেখানে সুশিক্ষার প্রধান উপায়।

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *