বই পড়া – ১

এই মুহুর্তে ফেসবুকে বইয়ের তালিকা দেয়ার রেওয়াজ চলছে, ব্যাপারটা আমি টের পেয়েছি Jubaead Dweep এবং Monzu Mozumder দ্বারা ট্যাগিত হয়ে। বছর দেড়েক আগে দিপ আমার একটি সাক্ষাতকার নিয়েছিল – সিনেমা এবং ব্লগিং নিয়ে, সেখানে সেরা সিনেমার নাম জানতে চেয়েছিল সে। সুপারলেটিভ ডিগ্রির যে কোন কিছুতেই আমার সবসময়ের দুর্বলতা, তাই সেরা দশটা বইয়ের নাম দেয়া আমার পক্ষে অসম্ভব – এই দুই ভাইয়ের কাছে মাফ চাই। আমি বরং বই পড়া নিয়ে ‘চলছে-চলুক’ টাইপের কিছু বকবক করি।

গত বৃহস্পতিবার যে বইটি পড়া শেষ করেছি তার নাম ‘ট্রেন টু পাকিস্তান’, লেখক খুশবন্ত সিং। ভদ্রলোক চটুল চুটকি এবং সাহিত্যের জন্য বেশ পরিচিত। তার সাথে আমারও পরিচয় এ ধরনের কোন গল্পের মাধ্যমে, কোন এক মাসিক পত্রিকায় কিস্তি আকারে প্রকাশিত গল্পে, বেশ বাচ্চাকালে, প্রাইমারীতে থাকাকালীন। পরে টুকটাক কিছু জোকস পড়েছি, জোকসের কালেকশনও পড়েছি, পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস এই প্রথম। ১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তান বিভাগের পরবর্তী সময়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা – বিশেষত মুসলমান এবং শিখদের মধ্যে – ট্রেন টু পাকিস্তান উপন্যাসের পটভূমি। সীমান্তবর্তী এক গ্রাম যেখানে মুসলমান এবং শিখরা সম্প্রীতিময় জীবন যাপন করছে সেখানে একদিন এক ট্রেন এসে হাজির হয় – ট্রেনভর্তি শুধু লাশ আর লাশ। তারপরের কয়েকদিনের ঘটনা নিয়ে সাজানো উপন্যাসটি। ১৯৪৭ এর দাঙ্গা কি – এই এক উপন্যাসে ভালো ধারনা পাওয়া যাবে। দারুন তৃপ্তি পেয়েছি এই বই পড়ে।

মাস তিনেক ধরে একটু একটু করে পড়ছি যে বইটি সেটি ফিকশনের চেয়ে কোন অংশে কম নয়, তবে বইটি ফিকশনও নয়। মির্জা ইওয়ার বেগ রচিত ‘লিডারশিপ লেসনস ফ্রম দ্য লাইফ অব রাসুলুল্লাহ (স)‘। শ-তিনেক পৃষ্ঠার ইংরেজি বই। রাসূল (স) এর জীবনের ঘটনাবলী তুলে ধরে তার লিডারশিপ গুণাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন ইওয়ার বেগ। আমি অত্যন্ত অত্যন্ত তৃপ্ত হয়েছি রাসূল (স) এর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো দিয়ে – বদর যুদ্ধ, খন্দকের যুদ্ধ, হুদাইবিয়ার সন্ধি, তায়েফের ঘটনা, হিজরত, মক্কা বিজয়, মৃত্যু – এত ডিটেইলে আগে কখনো সীরাত গ্রন্থ পড়া হয় নি। লিডারশিপ কোয়ালিটি ফাও হিসেবে পাওয়া যাবে, কিন্তু রাসূল (স) এর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জানার জন্য একে আমি খুব রেকমেন্ড করবো।

প্রচুর বইপড়ুয়া, ইংরেজিতে যাদের ‘অ্যাভিড রিডারস’ বলে এমন দুইজনের ভালোবাসা পাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। এদের একজন ভদ্রবালক, অন্যজন ভদ্রবালিকা। একজ বাংলায় লেখা বই পড়ে, অন্যজন ইংরেজি। তাদের বই পড়ার অভ্যাসকে আমি হিংসা করি এবং হিংসা করবো। আল্লাহ তাদেরকে আমার হিংসা থেকে বাঁচিয়ে রাখুক।

এই জীবনে প্রতিযোগিতা করে বই পড়েছি মাত্র একটি, গত বছর। বইয়ের নাম – কিলিং ফ্লোর, লেখকের নাম লি চাইল্ড। চরিত্রের নাম জ্যাক রিচার। ইংরেজি বই। ছোট ভাইয়ের সাথে প্রতিযোগিতা করে সগৌরবে হেরে গিয়েছি। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণই বড় কথা – হারজিত বড় কথা নয়!

সর্বশেষ – সবাই হুমায়ূন আহমেদ পড়তে চায়, কিন্তু হুমায়ূন আহমেদের বইগুলোতে এত এত যে সকল বইয়ের রেফারেন্স থাকে – সেই বইগুলো পড়ার আগ্রহ ক’জনের হয়?

বিঃদ্রঃ কাউকে ত্যাক্ত (Tagged) করলাম না, তাই বলে আপনার লিস্টে আমাকে ত্যক্ত করতে ভুইলেন না। এই সুযোগে অন্তত কিছু বই আর লেখকের নাম জেনে নেই।

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *