হাতিরঝিল উদ্বোধন হওয়ার পর পর জায়গাটার গুরুত্ব দুই দল মানুষের কাছে ভুস করে বেড়ে গেল! একদল হল টিভি মিডিয়ার সাথে সম্পৃক্ত লোকজন। টেলিভিশনের যত অনুষ্ঠান – নাটক থেকে শুরু করে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, টকশো থেকে শুরু করে রান্না-বান্না-রূপচর্চা – সবই হাতিরঝিলের আলো ঝলমলে ঝুলন্ত সেতুর সামনে হতে লাগল। দ্বিতীয় দল হল ঢাকার যত প্রেমিক জুটি – প্রি ম্যারিটাল, ম্যারিটাল এবং এক্সট্রা ম্যারিটাল রিলেশনশিপে এনগেজড কিউপিড দেবীর অনুসারীরা। জাতীয়তাবাদী প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরস্থানকে ঘিরে যে সৌন্দর্যবর্ধন বিএনপি সরকার করেছিল, আওয়ামী সরকারের কল্যাণে তা এখন প্রায় পরিত্যক্ত ডেটিং স্পট। ফলতঃ হাতিরঝিল উত্তম বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করতে প্রেমিক সম্প্রদায়ের আপত্তি হয় নি।
উদ্বোধনের মাসখানেক পর কোন এক সন্ধ্যায় হাতিরঝিলের ভেতর দিয়ে আসতে হয়েছিল। ঝলমলে আলোর সৌন্দর্য দেখার জন্য এদিক সেদিক তাকাতে গিয়ে বিব্রতকর অবস্থার মুখে পড়তে হল। সৌন্দর্য দেখবো কি, জাগতিক লীলাখেলার টুর্ণামেন্টের বাধ্যতামূলক দর্শক হওয়ার চেয়ে অধোবদনে দ্রুত প্রস্থান শ্রেয়তর মনে হয়েছিল।
আজ আবার হাতিরঝিল দিয়ে যেতে হল। সকালে। ফ্লাইওভারে ওঠার পর চোখে পড়ল, রেলিং এর বাইরের প্রান্তে তারকাঁটার গোল বেড়া দেয়া হয়েছে। কেন বুঝতে সমস্যা হল না মোটেও। ঘটনাচক্রে বিকেলে হাতিরঝিল দিয়েই ফিরছিলাম, এবার সাথে অফিসের জিএম। গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে দেখতে দেখতে বললেন – ‘এই জায়গাটাও একসময় বোটানিক্যাল গার্ডেনের মত হবে’! আমি ভালোমানুষের মত মুখ করে জিজ্ঞেস করলাম – ‘স্যার এটা কি পজেটিভ বললেন, নাকি নেগেটিভ?’ তিনি ‘নেগেটিভ’ জানিয়ে তার জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা জানালেন – সেখানে তিনি একটি জুটিও দেখেন নি এরকম অবস্থায়, বাংলাদেশে কেন দেখেন?
নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে এই দৃশ্য দেখা যাবে কিভাবে? সেখানের প্যারেন্টস অনেক আধুনিক! তারা তাদের সন্তানের বন্ধুদেরকে ঘর পর্যন্ত নিয়ে আসার অনুমতি দেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হল-হোস্টেলগুলোতে সকলের প্রবেশ সিদ্ধ। এই দেশের প্যারেন্টস-রা আজও সেকেলে রয়ে গেছেন। প্রেম-প্রীতির পারমিশন দেয়া পর্যন্ত আধুনিক তারা হতে পারলেও বেডরুম পর্যন্ত নিয়ে আসার পারমিশন দেয়ার মত আধুনিক হতে পারেন নি। ফলে, অর্ধ-অনুমতিপ্রাপ্ত এই যুবক সম্প্রদায়কে বাধ্য হয়ে জলে-জঙ্গলে-হাটে-ঘাটে-মাঠে-ছাদে কুকর্মে রত হতে হয়।
অতএব, ডিয়ার প্যারেন্টস, আরেকটু আধুনিক হন! সন্তানের বিয়ে না দিন, প্রেম-পার্টনারকে ঘরে নিয়ে আসার পারমিশন অন্ততঃ দিন – আমরা একটু হাতিরঝিলের আলো ঝলমলে সৌন্দর্য উপভোগ করি!
(সর্বমোট 16 বার পঠিত, আজ পড়েছেন 3 জন)–এইটা আবার কিধরনের ফিনিশিং?!?
ভালো জিনিস ধরেছেন তো ভাই। দেখি ওইটা ঠিক করা যায় কিনা। ধন্যবাদ 🙂