আর্কিটেকচার ১০১: প্রেমের স্থাপত্য

আর্কিটেকচার ১০১ চলচ্চিত্রটির দৃশ্য

আর্কিটেকচার ১০১ সিনেমা নিয়ে আলোচনার আগে একটা প্রশ্ন। প্রথম প্রেম হয়েছিল যার সাথে তার সাথে যদি পুনরায় সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ দেয়া হয় তাহলে কি করবেন? প্রায় একহাজার অবিবাহিত ব্যক্তিকে দুটো অপশন থেকে বাছাইয়ের সুযোগ দিয়ে এই প্রশ্ন করা হয়েছিল। শতকরা সত্তর জন বলেছেন – প্রথম প্রেমকে তারা তাদের স্মৃতিতেই রাখতে চান, পুনরায় সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ পাওয়ার পরও। প্রথম প্রেম নিয়ে এই গবেষনা করার পেছনে অন্যতম কারণ হল আর্কিটেকচার ১০১ সিনেমাটি যা সবচে বেশীবার দেখা কোরিয়ান মেলোড্রামা সিনেমার তালিকায় এক নাম্বার। কতবার দেখা হয়েছিল সিনেমাটি? নয় সপ্তাহে একচল্লিশ লক্ষবার। ঘটনাস্থল দক্ষিন কোরিয়া।

প্রথম প্রেমের প্রসঙ্গ আসলে ফ্ল্যাশব্যাকে যেতে হবেই। আর্কিটেকচার ১০১ চলচ্চিত্রটির গল্পও তাই একবার বর্তমান, একবার অতীতে আসা যাওয়ার মাঝেই থাকে। বর্তমান সময়ে সিউলের এক আর্কিটেক্ট লি সাং-মিনের কাছে নিজেদের পুরানো বাড়িটি নতুন করে তৈরী করার অনুরোধ নিয়ে হাজির হয় ইয়াং সি-য়োন। প্রথমে আপত্তি করলেও পরে অফিসের চাপে কাজটি গ্রহণ করে লি। ক্লায়েন্ট ইয়াং সি-য়োনের সাথে আলোচনা করে তার পছন্দমত বাড়ি ডিজাইনের কাজ শুরু করে সে। কিন্তু এর ফাঁকে তার মনে পড়ে যায় সতেরো বছর আগেরকার ঘটনাগুলো – যখন ইয়াং ই-য়োনের প্রেমে পড়েছিল সে। নকশা চূড়ান্ত করে বাড়ি তৈরীর কাজ যখন চলছে, তখন ফ্ল্যাশব্যাকে কলেজের প্রথম বর্ষে পড়ুয়া দুটো কিশোর-কিশোরীর ভালোলাগার সম্পর্ক তৈরীর ঘটনাও দর্শক জানছে।

কিশোর বয়সের প্রেম বলেই এই ছবিটি এত বেশী দর্শককে আকৃষ্ট করতে পেরেছে। ধারনা করা হয়, বেশীরভাগ দর্শকই এই ছবির মাধ্যমে তাদের প্রথম প্রেমের স্মৃতিকে ঝালিয়ে বা মিলিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছেন। এক কিশোরের তার অব্যক্ত ভালোবাসা প্রকাশ করতে না পারার যন্ত্রনা, কিশোরীর সরল আচরণ, কিশোরের অভিজ্ঞ বন্ধুর নানা রকম উদ্ভট পরামর্শ, এবং বর্তমান সময়ে আর্কিটেক্ট এর প্রতি যুবতীর আগ্রহ, আর্কিটেক্ট এর প্রেমিকার সন্দেহ-সংশয় আর চমৎকার এক পরিবেশে একটি বাড়ির নির্মান কাজ – সব মিলিয়ে আর্কিটেকচার ১০১ দর্শককে মোহাবিষ্ট করে রাখে।

অন্যদিকে, চলচ্চিত্র নির্মানে আগ্রহীদের জন্যও একটি ভালো চলচ্চিত্র হবে আর্কিটেকচার ১০১। ফ্ল্যাশব্যাকে সতেরো বছর আগের সময়কে তুলে ধরতে সেই সময়ের জনপ্রিয় কিছু উপকরণ যেমন পোর্টেবল সিডি প্লেয়ার, পেজার, টিশার্ট বা জনপ্রিয় শিল্পীর জনপ্রিয় গান – ইত্যাদিকে কতটা বাস্তবসম্মত উপায়ে তুলে ধরা যায় সেটা এই চলচ্চিত্রে আছে। বলা বাহুল্য, এ সকল উপকরণও একটি নির্দিষ্ট বয়সের দর্শককে সিনেমা দেখার জন্য উৎসাহিত করেছে। নিজেই ভাবুন না, এমন কোন বাংলাদেশী ছবি যেখানে ছবির প্রধান চরিত্র আইয়ূব বাচ্চুর ‘চল বদলে যাই’ শুনছে টেপ রেকর্ডারে – আপনার সেই কৈশোরের দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যাবে না?

Architect 101
এই বাড়িটা সিনেমার প্রয়োজনে সত্যিই নির্মিত হয়েছিল। এখন একটি রেস্টুরেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ভেতরটা সম্পর্কে জানতে হলে পুরো চলচ্চিত্রটি দেখতে হবে আপনাকে।

ছবির পরিচালক লি ইয়াং-জো নিজেও আর্কিটেকচারের ছাত্র ছিলেন। চলচ্চিত্রের প্রয়োজনে একটি সত্যিকারের বাড়ির নকশা তৈরী করেছেন, বানিয়েছেন সেই বাড়িটিও। মাঝে একবার ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হলেও মেরামত করে এখন রেস্টুরেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে সেই বাড়িটি। কিশোরী ইয়াং ই-য়োন চরিত্রে অভিনয় করেছে সুজি – এর আগে টিভি সিরিজে অভিনয় করলেও এটাই তার প্রথম চলচ্চিত্র এবং চমৎকার অভিনয়ের কারণে পুরস্কারও জিতে নিয়েছে বেশ কিছু।

অজানা কোন এক কারণে আর্কিটেকচার বিষয়টির উপর আমার কিছুটা দুর্বলতা রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ঢাকা ও খুলনার আট দশজন আর্কিটেক্ট ছোট ভাই-বন্ধুও তৈরী হয়েছে। এই মুভিটা দেখার সময় তাদের কথা বারবার মনে পড়ছিল – তাদের জন্য রেকমেন্ডেড এই মুভিটি এবং উপহার এই পোস্টটি ।

তথ্যসূত্র:

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

6 Comments on “আর্কিটেকচার ১০১: প্রেমের স্থাপত্য”

    1. দারাশিকো’র ব্লগে স্বাগতম রাশিদুল হাসান।
      মনে হচ্ছে আপনারও মেজর আর্কিটেকচার। বুয়েট?
      ভালো থাকবেন 🙂

  1. আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত এ ধরনের চলচ্চিত্র হয় নি। যেখানে যদি ৯০ দশকের চিত্র সম্পূর্নভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়। এট সত্যি যে প্রথম প্রেম বা ভাল লাগা কখন ভোলার নয়।

  2. architecture 101 গুনে গুনে দশ বার দেখলাম। স্থাপত্য আর নান্দনিকতা যে একে অপরের হাত ধরে চলে তা আরেকবার দেখিয়ে দিলেন এই গুনী পরিচালক।আমি নিজে প্রচুর মুভি দেখি। কিন্তু Architecture101 আমার মন ছুঁয়ে গেছে।
    আমাদের বাংলা ছিঃনেমা পরিচালক দের অবশ্য এই মুভি দেখা কর্তব্য।

Leave a Reply to Mr. Click Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *