গল্প: বাইসাইকেলে সিঙ্গেল ইঞ্জিন

সাইকেল চালিয়ে অফিসে যাচ্ছি, হঠাৎ একটা রিকশা পাশ দিয়ে ‘সাঁৎ’ করে রেরিয়ে গেল।

আমি দুবলা পাতলা মানুষ, চালাই ‘ফনিক্স’ সাইকেল। প্রতিদিন একাই অফিস যাই আসি, আজকে সকালে আমার সাথে যোগ হয়েছে আমার রুমমেট মনির। সে মোটামুটি বর্গাকৃতির মানুষ – দৈর্ঘ্য-প্রস্থ্যে সামান্য বেশ-কম। সাড়ে দশটায় গুলশানে তার কি যেন কাজ, হরতালে বাসে চড়ার চেয়ে আমার সাইকেলের ক্যারিয়ারে বসে নিকেতন পর্যন্ত পৌছে সেখান থেকে গুলশান চলে যাওয়া তার জন্য ‘বেটার অপশন’। এদিকে সাতরাস্তার মোড় পর্যন্ত আসতে আসতেই আমি ঘামে ভিজে একাকার। সাতরাস্তা পার হয়ে ডানদিকে তেজগাঁও-এর দিকে ঢুকে পড়তেই রিকশাটা ওভারটেক করল, পেছন থেকে মনির বলল – ‘মোটর রিক্সা। ব্যাপার না!’

রিকশার পেছনে মোটর লাগিয়ে কিছু রিকশা চলছে রাস্তায়, এদের গতি দারুন। প্রত্যেক ড্রাইভার একেকজন মাইকেল সুমাখার। রিকশার ঝাঁকের মধ্য দিয়ে কিভাবে বাঁক নিয়ে এগিয়ে যেতে হয় – সে বিষয়ে তাদের দক্ষতা অসাধারণ। মোটরে আওয়াজ কম হয় বলে – এরা পাশ কাটায়ে যায় ‘সাঁৎ’ করে।

বিটাক মোড়ের একটু আগে আরেকটা রিকশা টের পাওয়ার আগেই ‘সাৎ’ করে বেরিয়ে গেল। মোটরের গুঞ্জন শুনতে পাইনি বলে রিকশার চেইনের দিকে তাকালাম – ইঞ্জিন নেই! তাহলে? রিকশার যাত্রী একজন মেয়ে। মনির পেছন থেকে বলল – ‘সিঙ্গল ইঞ্জিন, ব্যাপার না, তুই চালা!’

অপমানজনক ব্যাপার স্যাপার। নটায় অফিস, আমি ঘুম থেকে উঠেছি পৌনে নটায়, সোয়া নটার পর অফিসে ঢুকলে ‘লেট’ মার্ক এবং দশটা পার হলে ‘অ্যাবসেন্ট মার্ক পরে, ক্যারি করার কারনে দ্রুতও চলতে পারছি না। আবার, তিনচাকার রিকশা সাইকেলের চেয়ে ভারী, পাইলট ছাড়া একজন যাত্রী – তারপরও সাইকেলের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে, এবং, পেছনে মনির গান গাচ্ছে ‘রিকশা কেন আস্তে চলে না ও ভাইরে রিক্সা কেন আস্তে চলে না? – আমার কান গরম হয়ে গেল।

কান ঠান্ডা হওয়ার আগেই আরেকটা রিকশা ‘সাৎ’ করে বেরিয়ে গেল। আমি ঝট করে প্রথমে চেন তারপর হুডের দিকে তাকালাম। মোটর নেই এবং রিকশায় দুজন যাত্রী – মহিলা। মনির গান থামিয়ে বলল, ‘ডাবল ইঞ্জিন! আরও শক্তিশালী।’

আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটির সামনে আসতেই দেখলাম রিক্তা দাড়িয়ে আছে। রিক্তা আমার ক্লাসমেট, এখন ব্র্যাক ব্যাংকের হেড অফিসে চাকরী করছে। আমি ‘ঘ্যাচ’ করে রিক্তার সামনে দাড়িয়ে পড়লাম। ‘কি অবস্থা রিক্তা? কই যাস?’

রিক্তা আমার সাইকেলটা ভালোভাবে দেখে হাসল – ‘দশটায় অফিস, খালি রিকশা পাচ্ছি না। তোমার গাড়িতে জায়গা আছে?’ রিক্তার চোখে কৌতুক।

‘মনির?’
‘কি?’
‘তুই নাম তো!’
‘ক্যান?’ বলতে বলতে মনির সাইকেলের ক্যারিয়ার থেকে নেমে দাড়াল।

‘তুই একটা রিক্সা নিয়ে গুলশান চলে যা। আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে। দশটা বাজতে দশমিনিট বাকী মাত্র। রিক্তা, তুই পেছনে শক্ত হয়ে বস।’

হতভম্ব মনিরকে পেছনে রেখে আমি একটা ‘সিঙ্গল ইঞ্জিন’ লাগিয়ে ‘সাৎ’ করে অফিসে চলে এলাম।

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *