সরকার সমীপে: ভারতীয় সিনেমা আমদানী এবং সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নে দাবীসমূহ

সরকার ভারতীয় সিনেমা আমদানীর অনুমতি দিয়ে এদেশে ভারতীয় সিনেমা প্রবেশের দরজা খুলে দিয়েছে, এদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে দুস্থ অবস্থা থেকে মৃত্যুশয্যায় নিয়ে গিয়েছে। যেখানে সরকারই সকল সিদ্ধান্তের মূল চালিকাশক্তি এবং দেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নানা আপত্তি-বিপত্তি-আন্দোলন-সংগ্রামকে উপেক্ষা করে প্রভু ভারতের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করে গেছে – বিশেষত: ট্রানজিট, টিপাইমুখ, বিদ্যুৎ ইত্যাদির ক্ষেত্রে, তাতে ভারতীয় সিনেমা আমদানীর বিপক্ষের সকল মতামত প্রস্তাব উপেক্ষা করা হবে সেটাই স্বাভাবিক। তাই বলে বসে থাকা চলবে না – ভারতীয় সিনেমা প্রদর্শিত হওয়া মাত্রই ‘আমরা হেরে গেলাম’ মনোভাব নিয়ে আন্দোলন থেকে সরে আসা যাবে না – একাট্টা থাকতে হবে দাবীসমূহে।

১. ‘জোর’ সিনেমাই হবে আমদানীকৃত একমাত্র ভারতীয় সিনেমা। বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নে দাবীসমূহ মেনে না নিয়ে আর কোন ভারতীয় সিনেমা আমদানী করা যাবে না।

২. ভারতীয় সিনেমা আমদানী সংক্রান্ত কোন সুস্পষ্ট নীতিমালা নির্ধারন করা হয়নি এখনো। বছরে কটা ভারতীয় সিনেমা আমদানী করা হবে, সেই সিনেমা প্রদর্শনের ব্যাপারে কি কি নিয়মনীতি মেনে চলতে হবে, একটি সিনেমা একাধারে কতদিন সিনেমাহলে প্রদর্শন করা যাবে, একটি ভারতীয় সিনেমার পরিবর্তে কতগুলো বাংলাদেশী সিনেমা প্রদর্শন করতে হবে ইত্যাদি সংক্রান্ত সুস্পষ্ট নীতিমালা নির্ধারণ করতে হবে এবং তা অবশ্যই স্বল্প সময়ের মধ্যে। এই নীতিমালা প্রনয়নের আগে একটি ভারতীয় সিনেমাও এদেশে মুক্তি দেয়া যাবে না এবং নীতিমালা প্রণয়ন সাপেক্ষে পরবর্তী সিনেমা আমদানী করতে হবে।

৩. শুধু ভারতীয় সিনেমা আমদানীই নয়, বাংলাদেশী সিনেমা ভারতে রপ্তানী সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহন এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। ভারতীয় সিনেমা এবং বাংলাদেশী সিনেমা আমদানী রপ্তানীর অনুপাত সমান হতে হবে। প্রত্যেকটি ভারতীয় সিনেমার বিপক্ষে একটি করে বাংলাদেশী সিনেমা ভারতে প্রদর্শনের উদ্যোগ নিতে হবে ।

৪. ভারতীয় সিনেমা এদেশে প্রদর্শনের জন্য কোনরূপ প্রচার-প্রচারণার অনুমতি দেয়া যাবে না। এমনকি দেশের ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়াতে নিউজ আকারে কোথায় কোন ভারতীয় সিনেমা প্রদর্শন হচ্ছে সে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারী করতে হবে।

৫. সরকারকে আগামী ছয়মাসের মধ্যে বাংলাদেশী সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির প্রযুক্তিগত এবং গুনগত উন্নয়নের জন্য কমপক্ষে পাচ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে, সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ অনুমোদন করতে হবে। সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি উন্নয়ন পরিকল্পনায় উন্নতমানের আধুনিক যন্ত্রপাতি আমদানী এবং সহজলভ্য করা, কলাকুশলীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা, দেশের সিনেমাহলগুলোর মানোন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা, সিনেমা নির্মানে নতুন পরিচালক এবং কলাকুশলীদের উদ্বুদ্ধকরনে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা, সিনেমার গ্রেডিং এবং সিনেমা নির্মান নীতিমালা প্রণয়ন করা, সেন্সরবোর্ড নীতিমালাকে যুগোপযোগী এবং স্বাধীন করা, পাইরেসি বন্ধের জন্য কঠোরতর আইন প্রয়োগ এবং বাস্তবায়ন ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।

৬. সময়োপযোগী সিনেমা নির্মানের জন্য নিয়মিতভাবে পর্যাপ্ত পরিমান অনুদান বরাদ্দ করতে হবে, বরাদ্দকৃত অনুদানের পরিমান বাড়াতে হবে, অনুদানের জন্য নতুন পরিচালকদেরকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

৭.অবিলম্বে দেশে একটি পূর্নাঙ্গ চলচ্চিত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করতে হবে। আন্তর্জাতিক মানের কারিকুলাম প্রনয়ন, যোগ্য এবং দক্ষ শিক্ষকমন্ডলী নিয়োগ এবং প্রয়োজনীয় কারিগরী সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।

৮. বাংলাদেশে ভারতীয় চ্যানেল সম্প্রচার নিয়ন্ত্রন করতে হবে, ভারতে বাংলাদেশী চ্যানেলসমূহ সম্প্রচারের উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে। ভারতে বাংলাদেশী চ্যানেল সম্প্রচারের অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত এদেশে ভারতীয় চ্যানেল সম্প্রচার বন্ধ রাখতে হবে।

নিবেদক,

বাংলাদেশী সিনেমার উন্নয়ন প্রত্যাশী একজন দর্শক

ফেসবুক নোটে প্রকাশ: নির্দ্বিধায় শেয়ারযোগ্য

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

7 Comments on “সরকার সমীপে: ভারতীয় সিনেমা আমদানী এবং সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নে দাবীসমূহ”

  1. ২ এবং ৩ নং এর বিষয়েঃ ভারত যদি আমাদের সিনেমা প্রদর্শণ করতে না চায়, কারন বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতেই বলা যায় বাংলাদেশের ছবির ব্যাপারে ভারত আগ্রহ প্রকাশ করবেনা, সেক্ষেত্রে কী করা যাবে?

    ৪ নং এর বিষয়েঃ যদি ভারতীয় ছবি আমদানী করা হয়ই, তাহলে প্রচারণা করতে বাধা কেন দেয়া হবে? টাকা খরচ করে যারা ছবি আমদানী করছে তাদেরকে লাভবান হতে দিতে কেন আমরা বাধা দেব? এটা কী কিছুটা নাচতে নেমে ঘোমটা টানা হচ্ছেনা?

    ৫,৬,৭,৮ নং পয়েন্টের সাথে ভারতীয় সিনেমা আমদানীর কোন সম্পর্ক আছে বলে মনে হয়না। এসব দাবী অবশ্যই যৌক্তিক এবং এই কাজগুলো করা অত্যন্ত দরকার।কিন্তু এই কাজগুলো ভারতীয় সিনেমা আমদানী করলেই করতে হবে এমন কোন কারন নেই। স্বাভাবিকভাবেই এই কাজগুলো করা দরকার।

    খুব তাড়াহুড়োয় আছেন নাকি? এরকম আধাখেচঁড়া লেখা আপনি সর্বশেষ কবে লিখেছেন আমার অন্তত মনে পড়েনা। দারুন স্পর্শকাতর এবং সময়ের দাবী এই বিষয়টা নিয়ে একটু সময় নিয়ে বিশ্লেষনাত্মক লেখা লিখুন।

    কিছু মনে করবেন না দয়া করে। একটু অধিকার নিয়েই এইটুকু সমালোচনা বা আলচনা যাই বলুন, করলাম।

    1. বস,
      ২ ও ৩ এর বিষয়ে: বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে সত্যিই বাংলাদেশী সিনেমা ভারতে প্রদর্শনযোগ্য না, বিশেষত বানিজ্যিক সিনেমাগুলো। কিন্তু বানিজ্যিক সিনেমার বাইরেও অনেক সিনেমা হচ্ছে যা ভারতে ফেস্টিভালে প্রদর্শিত হচ্ছে। সেগুলো হলে মুক্তি দেয়া উচিত। ভারত আগ্রহ প্রকাশ করবে না সেটাই স্বাভাবিক – আমরা কি করবো সেটা আসল ব্যাপার। আমার মনে হয়, সরকার যদি এই সিদ্ধান্তে কঠোর থাকে যে একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে ভারতীয় সিনেমা আমদানীর বিপরীতে বাংলাদেশী সিনেমা প্রদর্শন করতে হবে, অন্যথায় ভারতীয় সিনেমা আমদানী নয় – তবে সেটা গ্রহনযোগ্য। যুদ্ধটা সংস্কৃতিকে দখল করা নিয়ে, সুতরাং আর্থিকভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হবো হয়তো, কিন্তু নিজেদেরটা শীঘ্রই হারাবো না।

      ৪ নং বিষয়ে: নাচতে নেমে ঘোমটা দেয়া হচ্ছে বৈকি। উদ্দেশ্যটা পরিস্কার। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কিছু ব্যবস্থা নিতেই হবে – এই নির্দিষ্ট সময়ে বাকী কাজগুলো সম্পাদন করতে হবে। বিজ্ঞাপন-প্রচারণার অভাবে একটা ভারতীয় সিনেমার বিপরীতে একটা বাংলাদেশী সিনেমার ব্যবসা করার সুযোগটা সামান্য হলেও বেশী থাকবে। এটা ইনটেনশনালী বায়াসড।

      ৫,৬,৭,৮ নং পয়েন্টের সাথে ভারতীয় সিনেমা আমদানীর কোন সম্পর্ক নেই সত্যি – কিন্তু এই পয়েন্টগুলো সিনেমাপ্রেমী সকলকে একটা সাধারণ প্ল্যাটফর্মে দাড়াতে সাহায্য করবে। অন্তত: বিগত বছরগুলোতে এই পয়েন্টগুলোতে আন্দোলন হয়নি, যা হয়েছে তা হাতেগোনা কিছু মানুষ এবং ফিল্ম সোসাইটির কল্যানে। এখন একে সবার আন্দোলনের বিষয়ে পরিণত করা উচিত।

      খুব তাড়াহুড়ো না, আবার তাড়াহুড়ো। পরীক্ষা চলতেসে। এইটা একপ্রকার ফরমায়েশি লেখা। ভারতীয় সিনেমা আমদানী নিয়ে পোস্ট লিখছি কয়েকটা, মন্তব্য করতেসি সব জায়গায়। আগামী ২৩ ডিসেম্বর সিনেমাখোরদের একটা আড্ডা হতে যাচ্ছে টিএসসি-তে। এই প্ল্যাটফর্ম থেকে একটা প্রতিবাদ কর্মসূচী আয়োজনের ইচ্ছা আছে। সে কারণেই দাবী দাওয়া প্রস্তুতকরণ। প্রেক্ষাপট, কার্যকারণ ইত্যাদি বাদ দিয়ে শুধূ দাবী আকারে তুলে ধরা হয়েছে।

      মনে করার কিছুই নাই বস। সব্বাই তো ‘ভালো’ ‘একমত’ টাইপের কমেন্ট করে, দ্বিমতের কারণগুলো ব্যাখ্যা করলে আমারও কিছু শেখার থাকে। আপনার এই কমেন্টে কোটি ধন্যবাদ 🙂

  2. ২ ও ৩ এর বিষয়েঃ ফেস্টিভালে প্রদর্শিত হওয়া আর হলে প্রদর্শিত হওয়ার মধ্যে নিশ্চয়ই পার্থক্য আছে। আমদানি-রফতানির ব্যাপারে ব্যবসাটা মূখ্য থাকবে। সুতরাং ভারত এক্ষেত্রে আগ্রহ দেখাবেনা। কারন ভারত আমাদের দেশে ছবি রফতানি না ‘করলেও’ তাদের চলবে, আমদানিটা আমরাই করছি আমাদের প্রয়োজনে। সুতরাং ভারতের অবস্থানটা এখানে শক্তিশালি হবেই। আর ভারতকে তো চেনেনই, ব্যাবসা ছাড়া এক পাও তারা আগাবেনা।

    সংস্কৃতি দখলের যুদ্ধ করার আমাদের আস্ত্রটাই তো ভীষন দূর্বল। AK-47 এর সামনে ছুরি নিয়ে দাঁড়ানো যাবে?

    এখন ধরি ভারত আমাদের ম্যুভি প্রদর্শন করবে না। এক্ষেত্রে আপনার সাজেশান কী? কারন আমাদের দেশ যুক্তি দেখাচ্ছে আমাদের চলচ্চিত্রের সংকট কাটাতেই আমরা ভারত থেকে আমদানী করতে যাচ্ছি। এটা কোন সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান নয়।স্রেফ আমি কিছু জিনিস কিনে আনছি, নিজে বাঁচার জন্য।

    ৪ নং এর বিষয়েঃ ভারতীয় ছবির বিজ্ঞাপন প্রচারনার অভাবে যদি বাংলা ছবি ভালো ব্যবসা করতে পারে তাহলে এই বাংলা ছবিটিই কেন ভারতীয় ছবি আমদানী না করলে আরো ভালো ব্যবসা করতে পারবেনা? যদি পারেই, তাহলে কেন ভারতীয় ছবি আমদানী করা? আপনি টাকা খরচ করে আমদানী করলেন, সিনেমা হলগুলো যাতে ব্যবসা করতে পারে, হলগুলো যেন বন্ধ না হয়ে যায়, যেন এদেশের ছবির স্ট্যান্ডার্ড বা সুযোগ বাড়ে। আর এনে যদি আপনি সে ছবিকে ব্যবসা করার সুযোগ না দেন বা একটা বাংলা ছবির চেয়ে কম ব্যবসা করতে বলেন, তাহলে খালি মাঠে বাংলা ছবিই সেই ব্যবসাটা করুক বা তার চেয়ে বেশি ব্যবসা করুক। আর ছবি যে কারনে আমদানী করলেন, প্রচার প্রচারণার পায়ে শেকল পড়ালে আপনার উদ্দেশ্য কতখানিই বা সফল হবে? নাকি বাংলাদেশের হলগুলোকে বোঝানো যে দেখ, ভারতীয় ছবির চেয়ে আমদের ছবিতে ব্যবসা বেশি হচ্ছে। এটা একটা কৌশল হতে পারে, তবে সেটা হালে টিকবেনা।

    ””৫,৬,৭,৮ নং পয়েন্টের সাথে ভারতীয় সিনেমা আমদানীর কোন সম্পর্ক নেই সত্যি – কিন্তু এই পয়েন্টগুলো সিনেমাপ্রেমী সকলকে একটা সাধারণ প্ল্যাটফর্মে দাড়াতে সাহায্য করবে””—–ভালো লাগলো এই জিনিসটা।একটা প্ল্যাটফরম আসলেই দরকার।একটা সামগ্রিক স্ট্যান্ডিং দরকার।

    প্রেক্ষাপট-কার্যকারণ বাদ দিয়ে তুলে ধরেছেন সেটা একটু ভুল বুঝেছিলাম আমি। সেজন্যে লজ্জ্বিত। আসলে আপনার লেখার উপর অনেক প্রত্যাশা থাকে, তাই অন্তর না ভরলেই রাগ লাগে। আপনার কাছে আমার সবসময়ের দাবী, প্রেক্ষাপট-কার্যকারন, সমাধান এইসব নিয়ে বেশ সময় করে একটা লেখা লিখুন। পারলে পত্রিকায় প্রকাশের ব্যবস্থা করুন।টলিউড পর্যন্ত কামব্যাক করছে আর আমরা পিছিয়েই আছি। দেখেন কিছু একটা করা যায় কিনা!

    শুভকামনা সবসময়।

    1. জয় ভাই,
      আপনার যে পয়েন্টগুলা বলসেন সেগুলা আমি জানিই, কিন্তু কখনো বলবো না। কেন বলবো না সেইটা আপনি বুঝবেন। দেশে সিনেমার আমদানী হলে সিনেমার ব্যবসা কিছুটা ভালো হবে এটা মানছি, কিন্তু সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির উন্নতি হবে বলে সবাই যে ধারনা করছে সেটা ভুল। একবার ভারতীয় সিনেমা আমদানী যদি করা শুরু হয় সেটা বন্ধ হবার সম্ভাবনা কম, তাছাড়া সরকার যেহেতু কোনরকম নীতিমাল প্রণয়ন না করেই আমদানী করছে তখন এর পরিমানটা বাড়বে বৈ কমবে না। একটা ভারতীয় সিনেমা একটা গতানুগতিক বাংলা সিনেমার চে ভালো ব্যবসা করবেই – সেক্ষেত্রে একজন হল মালিক বাংলাদেশী সিনেমার পরিবর্তে যদি ভারতীয় সিনেমা দেখায় তাহলে সিনেমা নির্মানের পরিমান আরও কমবে। সেক্ষেত্রে এফডিসি-কে ভেংগে অন্য কিছু বানাতে হবে। ভয় পাচ্ছি, এরকম অবস্থা সৃষ্টি হলে নতুন উঠতি পরিচালকদের জন্য কাজটা অনেক কঠিন হয়ে যাবে। আমি সবসময় ঠিক চিন্তা করছি সেটা নাও হতে পারে, সেটা আমার সীমাবদ্ধতা, কিন্তু ভয়টা যে তাড়াতে পারি না ভাই।
      ভারত আমাদের মুভি প্রদর্শন না করলে আমাদের সত্যিই কিছু করার নাই। ভারত তখনই একটা সিনেমা দেখাবে যখন নিশ্চিত হবে যে সেই সিনেমাটা ভালো ব্যবসা করবে। সুতরাং আন্তর্জাতিকমানের সিনেমা ছাড়া ভারতে সিনেমা প্রদর্শনের কোন সুযোগ নেই। সেরকম সিনেমা যে নাই, তা নয়, কিন্তু সেগুলোর একটা ট্যাগ আছে – আর্ট ফিল্ম। কমার্শিয়াল সিনেমা বানাতে যে বাজেট সেটা দেয়ার ক্ষমতা আছে এম এ জলিল অনন্তের, কিন্তু সে নায়ক হিসেবে সেই টাকা উসুল করার যোগ্য না। সুতরাং, এই প্রশ্নের জবাব আমার কাছে নাই, সত্যিই নাই।
      বাংলাদেশে এখন যে মানের বানিজ্যিক সিনেমা তৈরী হচ্ছে তা ভারতের সিনেমার সাথে টিকতে পারবে না – এইটা সত্যি কথা। একটা ভারতীয় এবং একটা বাংলাদেশী সিনেমার পোস্টার পাশাপাশি পড়লে দর্শক ভারতীয়টাই দেখতে যাবে এইটা স্বাভাবিক – ফলে মূলধন তুলে আনার যে সম্ভাবনাটুকু ছিল সেটাও হারাতে হবে বাংলা সিনেমাকে যা আবার সিনেমায় বিনিয়োগে বাধা দিবে। ফলে, প্রথম প্যারাগ্রাফে যা বলছি, ঠিক তাই হবে। আমার ক্ষীণ আশা, মূলধন ফিরে এলে আবারও বিনিয়োগ হবে সিনেমায়, অন্তত ইন্ডাস্ট্রিটা চালু থাকবে।
      টলিউড কাম ব্যাক করেছে সেইটা সত্যি কিন্তু টলিউডের কামব্যাকের পেছনের কাহিনীটা কি জানেন জয় ভাই? আমি বারবার বলতে চেষ্টা করছি ওখানকার সরকার এইসব ব্যাপারে সাহায্য করে কিন্তু রেফারেন্স দিতে পারি নাই। কয়দিন আগে ক্যাথেরিন মাসুদের একটা লেখা প্রথম আলোতে আসছিল, তিনি ভারতীয়সহ সব সিনেমা আমদানীর পক্ষে বলসেন, কিন্তু এর চেয়ে বেশী গুরুত্ব দিয়ে বলছেন সরকারী সহায়তার কথা। ক্যাথেরিন মাসুদ বলসে বলে হয়তো কিছুটা গুরুত্ব পেতে পারে, কিন্তু আমি বা আপনি এই কথা বললে সবাই বলবে – ‘৪০ বছর তো অনেক সুবিধা দেয়া হৈসে, আর কতো? কি করতে পারসে এই ৪০ বছরে?’ কিন্তু এই ৪০ বছরের সুবিধা যে কত কম সেইটা বোঝা যাবে টলিউডের সাথে তুলনা করলে। আপনি না পড়লে এখান থেকে পড়ে নিবেন বস। http://www.prothom-alo.com/detail/news/197240

      সুবিধা সরকারকেই দিতে হবে, কোন না কোন উপায়েই। সেটা শুল্ক কমিয়ে বা মাফ করে অথবা সরকারী অর্থায়নে গড়ে দিয়ে বা অন্য কোন উপায়ে। এত আন্দোলন এত সময় নিয়ে পোস্ট মন্তব্য ইত্যাদির তো একটাই কারণ – ভারত বিরোধিতা নয় বরং আমাদের দেশে যেন আন্তর্জাতিকমানের সিনেমা তৈরী হয় তার পরিবেশটা নিশ্চিত করা, তাই না? ভারতীয় সিনেমা আমদানীতে দ্বিমত থাকুক, দেশীয় সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়ন দাবীতে কেন এক হবো না এবং এক হওয়ার জন্য সাময়িকভাবে হলেও ভারতীয় সিনেমা আমদানীর বিরোধিতা করবো না?
      ভালো থাকবেন জয় ভাই, বাংলা সিনেমা নিয়া পোস্ট দিলেই খুব ইমোশনাল লাগে 🙁

  3. ভুলেও রাগ হৈয়েন্না আমার উপ্রে। আমিও ইমোশনাল হৈয়া যাই, তাই এত্ত কথা লিখি। আপ্নের লগে কথা কইতে ভালৈ লাগে। বুইঝা-না বুইঝা যা কৈ আশা করি ভালো দৃষ্টিতেই দেখেন। আমার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে, কিন্তু চলচিত্র প্রেমে ঘাটতি নেই। বাংলা সিনেমার ব্যাপারে আমিও ইমোশনাল।

    ভারতীয় সিনেমা আমদানির প্রভাব খুবই খারাপ হবে সেটা আমি বলে রাখলাম। সরকারের সাহায্য ছাড়া অসম্ভব সেটা জানি। সরকার টেকনিক্যাল এসিস্ট্যান্স না দিয়ে, যৌথ প্রযোজনায় ভালো ছবি না বানিয়ে, ভালো নির্মাতাদের প্রমোট না করে ভারতীয় সিনেমা এনে সাহায্য করছে!!! হায় কপাল!!

    দেখি ক্যাথরিন কী লিখসে।

    1. কিচ্ছু মনে করি নাই জয় ভাই – আপনি এইরকম কন্সট্রাকটিভ কমেন্ট সবসময় করবেন, তাহলে বেশ ভালো লাগবে।
      আবার আইসেন বস 🙂

Leave a Reply to জয় সরকার Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *