প্রতিহিংসার শিকার ‘জিয়া উদ্যান’

শিরোনাম নিয়া আমি শংকিত।
জিয়া উদ্যান বলার কারনে সরকার শাবল-বেলচা দিয়া আমার খোমা উপড়ায়া দিতে পারে, যেমনি উপড়ে ফেলা হয়েছিল জিয়া উদ্যানের ফলক। জিয়া উদ্যান হোক আর চন্দ্রিমা উদ্যান – আমি বলবো জিয়া উদ্যান, কারণ আমি প্রথমে জিয়া উদ্যানে গিয়েছিলাম, উদ্যানকে ভালোবেসেছিলাম, বিনা পয়সায় এর বিজ্ঞাপন করেছিলাম। হতে পারে একসময় এর নাম ছিল চন্দ্রিমা, জিয়াকে ফেলে দিয়ে নাম আবারও চন্দ্রিমাই হয়েছে – তাতে আমার কিছু যায় আসে না।

জিয়া উদ্যানে প্রথম গিয়েছিলাম বছর পাচেক আগে, ২০০৬ সালে। বিকেলে গিয়ে সন্ধ্যা পার করে ঘুরলাম। চমৎকার জায়গা। দারুন বাতাস, বেশ গোছানো। সন্ধ্যার পরে রূপ আরও খুললো যেন। ঝকঝকে আলোময় উদ্যান। জিয়ার কবরের চারদিকে সুন্দর লাইটিং। ভালো লাগে। ফেরার সময় লেকের উপরে সেতুটা দেখে মাথা খারাপ অবস্থা। ব্রিজটা আলো ঝলমল। পায়ের নিচে কাচের ভেতরে আলো। দুপাশে ফোয়ারা। একটু পর পর সশব্দে বিশেষ ছন্দে পানি ছুড়ে দিচ্ছে উপরে, নিচ থেকে রঙ্গীন আলো সেই পানির ঝর্ণাকে দৃষ্টিনন্দন করে তুলছে। এই চোখ যা দেখেছিল এই দুই হাত তা লিখতে পারছে না, দুর্ভাগ্য।

নাম ফলক পরিবর্তন কাহিনী (গুগল থেকে নেয়া )

জিয়া উদ্যান

দুবছর আগের দেখা জিয়া উদ্যান (গুগল থেকে নেয়া)

রাতের আলোময় জিয়া উদ্যান (গুগল থেকে নেয়া)

আজ পৌছুতে একটু দেরী হয়েছিল, সন্ধ্যা। ভয়াবহ অবস্থা। উদ্যানের ভেতরে গাছপালার অংশে একটা বাতিও জ্বলছে না। ঘুটঘুটে অন্ধকার। আমার বন্ধু মোবাইল বের করে টর্চ জ্বালালো। এক প্রকার হাতড়েই মূল বেদীতে পৌছানো হলো। আরও হতাশ হলাম। অযত্নে ঘাসের বাগান আর সেই রকম নেই। ঝোপগুলো ছাটা হয় নাই বেশ কিছু দিন। আগে মাঝের কবরের উপরে পিরামিড অংশে কাউকে উঠতে দেয়া হতো না, এখন দলবলে আড্ডাবাজি হচ্ছে সেখানে। মূল কবর অংশে একটাও বাতি জ্বলছে না, ঘুটঘুটে অন্ধকার। আলোর ছিটেফোটা যা পাওয়া যাচ্ছে তার সবটাই মোবাইল টর্চ হতে। আমরাও মোবাইল আলোতে একটু একটু ঘুরে দেখলাম।

বাহিরে দূরে দূরে কিছু কিছু স্ট্রিট লাইট জ্বলছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় বেশ অপ্রতুল। জায়গাটা মূলত আলোকিত হয়ে আছে চটপটি আর ফুচকাওয়ালাদের হ্যাজাকের আলোতে। জানা গেল মাস চারেক হলো এই অবস্থা। রাতে কোন বাতি জ্বালানো হয় না, নিরাপত্তারক্ষীদেরকে পাওয়া গেলনা কাউকেই। সেতুর কাছে এসে মনটা চূড়ান্ত খারাপ হলো। অন্ধকার সেতু। ফোয়ার বন্ধ। হয়তো আগত দর্শকরা সব্বাই আমার মতোই স্মৃতির জাবর কেটে চলছে, এ সময়টুকুতে তো উপভোগ করতে হবে !!

জিয়ার কবর

দেয়াল ভর্তি পোস্টারে !!

দোষ শুধু সরকারকে দিলেই হয় না। বিএনপির দোষও আছে। কবরের চারদিকের দেয়াল জুড়ে পোস্টার, জিয়ার ছবি যুক্ত। মাঝে মাঝে বেগম জিয়া কবর জিয়ারত করতে আসেন, তখন হয়তো পোস্টার বিতরনকারীর নাম লক্ষ্য করবেন এবং পরবর্তীবার ক্ষমতায় আসলে তাকে একটি ভালো পদ দান করবেন। আমাদের রাজনীতিকরা কতটা বেকুব আর পদলেহনকারী – এটা বোধহয় তার উপযুক্ত প্রমাণ।

দুবছর বাদে এসেছিলাম, আবার আসবো অন্তত: তিন বছর বাদে, বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এলে। প্রতিহিংসার এই কদর্য রূপ দেখতে ভালো লাগে না। হয়তো তিন বছর বাদে আজকের এই দৃশ্য আমি ভুলেই যাবো। ভুলবোই, কারণ আমি আর দশটা মানুষের মতোই সাধারণ বাংলাদেশী, যাদের মাথায় রাজনীতিকরা কাঠাল ভেংগে খায় আর খাওয়া শেয়ে বিচিটা … ঢুকায়া দেয়, আমরা সন্তুষ্টির হাসি বিতরণ করি।

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

One Comment on “প্রতিহিংসার শিকার ‘জিয়া উদ্যান’”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *